শুনানির শুরুতে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন আদালতকে বলেন, ‘এটি রাষ্ট্রধর্মের বিষয়। এটি নিয়ে পাবলিক ইন্টারেস্ট (আগ্রহ) আছে। বিষয়টি যদি আপনারা সবাই মিলে শুনতেন।’ পরে আদালত বৃহস্পতিবার বিষয়টির ওপর শুনানির জন্য আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন।
সংবিধানে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হওয়া রিট খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল আবেদনের শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার দিন ঠিক করেছে আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীসহ ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চে শুনানি হবে।
রোববার আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. নূরুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ বিষয়টি শুনানির জন্য তালিকায় এলে বিচারক ফুল বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন।
শুনানির শুরুতে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন আদালতকে বলেন, ‘এটি রাষ্ট্রধর্মের বিষয়। এটি নিয়ে পাবলিক ইন্টারেস্ট (আগ্রহ) আছে। বিষয়টি যদি আপনারা সবাই মিলে শুনতেন।’
পরে আদালত বৃহস্পতিবার বিষয়টির ওপর শুনানির জন্য আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট এস এন গোস্বামী। মামলায় পক্ষভুক্ত আবেদনকারীদের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী।
সংবিধানে অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৮৮ সালে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা হয়। পরবর্তীতে ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীতেও রাষ্ট্রধর্ম বহাল রাখা হয়।
সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে রাখার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৫ সালের ১ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমরেন্দ্র নাথ গোস্বামী রিট দায়ের করেন।
ওই রিটের ওপর শুনানি নিয়ে ২০১৫ সালের ৭ সেপ্টেম্বর বিচারপতি মো. এমদাদুল হক ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের বেঞ্চ রিটটি সরাসরি খারিজ করে দেয়।
এরপর ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর রায় প্রকাশ হয়। পরে ১২ নভেম্বর হাইকোর্টের এই খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেন আইনজীবী সমরেন্দ্র নাথ গোস্বামী।
পরে ২০১৭ সালের মার্চ মাসে সংবিধানে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট খারিজের বিরুদ্ধে করা আপিলের শুনানিতে পক্ষভুক্ত হতে বিভিন্ন পেশার পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি আবেদন করেন। আবেদনকারীরা হলেন- সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী তৈমুর আলম খন্দকার, অনলাইন বিশ্ববার্তার সম্পাদক আরিফুর রহমান, প্রজেক্ট বিল্ডিং লিমিটেডের পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. শওকত হোসেন খান, দেশ ইউনির্ভাসাল লিমিটেডের উপদেষ্টা লে. কর্নেল (অব.) আবু ইউসুফ জোবায়ের উল্লাহ ও আল-মুথ মাইনাহ মা ও শিশু হাসপাতালের মহাব্যবস্থাপক ডা. মোহাম্মদ আব্দুল আলী।
এ নিয়ে হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়, সংসদ দেশের বাস্তবতার নিরিখে সংবিধান সংশোধন করতে পারে। বাংলাদেশের বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বৈধ বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
রায়ে বলা হয়, দেশের বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে ধর্ম নিরপেক্ষতার পরিধি বাড়ানোর আইনত ও সাংবিধানিক এখতিয়ার সংসদের। সংসদ সেটাই করেছে।
পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, রাষ্ট্রধর্মের ধারণা আমাদের আদি সংবিধানে ছিল না। ১৯৮৮ সালে অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে ২ক অনুচ্ছেদ যুক্ত করা হয়, যেখানে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
এই সংশোধনীতে বলা হয় ‘২ (ক)। প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে অন্যন্য ধর্মও প্রজাতন্ত্রে শান্তিতে পালন করা যাইবে।’
২০১১ সালের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এটাকে (‘‘২ (ক) অনুচ্ছেদ) আরো কিছু পরিমার্জন করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘‘২ (ক)। প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ অন্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করিবেন।’
এ দ্বারা স্বীকৃত যে ‘‘২ (ক) অনুচ্ছেদে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করা হলেও অন্যান্য ধর্মকেও সমমর্যাদা ও সম অধিকার দেওয়া হয়েছে। এ কারণে আমরা ‘‘২ (ক) অনুচ্ছেদ বাতিলের আবেদন গ্রহণ করতে পারছি না।
বর্তমান বাস্তবতা বিবেচনায় ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ দেখার অধিকার জাতীয় সংসদের। জাতীয় সংসদ সেটাই করেছে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।